শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৩৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
ভেড়ামারা উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন স্থাগিত ॥ ক্ষুভে ফুঁসছে নেতাকর্মীরা॥ প্রতিবাদ সমাবেশ রাজাকারদের পাহারাদার দখলদার ইউনূস সরকারের প্রহসনের রায় ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ ৫ই আগষ্ট নোয়াখালী,চাটখিল থানা লুটের অস্ত্রে দিয়ে নিজেই নিজের গুলিতে আহত হয়ে মৃতুর ৯ মাস পর আদালতে অভিযোগ =!! ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে রায়গ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের বাজেট ঘোষণা মানবাধিকার সংগঠন ঐক্য পরিষদের পরিচিতি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত অভয়নগরে অগ্নিবীণা ১২৬ তম নজরুল জয়ন্তী উৎসব ‘২০২৫ পালিত। মেধা মূল্যায়ন ২০২৪ এর বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ! বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের নামে ভুয়া আইডি খুলে প্রতারণা খামারের গরু নিয়ে হাটে এসেছেন বিক্রির আশায়, গরুর দাম প্রত্যাশিত না হওয়ায় পড়েছেন বিপাকে ! ফটিকছড়ি জনকল্যাণ পরিষদের পুনর্গঠিত নতুন কার্যকরী কমিটি প্রথম সভা

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সংকট: কোন পথে সমাধান?

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সংকট: কোন পথে সমাধান? মো. কামাল উদ্দিন

রিপোর্টঃ
স.ম.জিয়াউর রহমান

সাংবাদিকতা, যাদের জাতির বিবেক ও রাষ্ট্রের তৃতীয় স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাদের একটি মহল আজ নিজেদের পবিত্র পেশাকে কলঙ্কিত করছে। একাংশের সাংবাদিকদের নির্ভীকতার চেয়ে দালালি, চাঁদাবাজি, তোষামোদিসহ অসংখ্য অপকর্মে লিপ্ত হতে দেখা যায়। এরা নিজেদের স্বার্থে প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়নকে নিজেদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করছে এবং এর মাধ্যমে বিভিন্ন সুবিধাও ভোগ করছে।
যারা প্রেসক্লাব বা ইউনিয়নের সদস্য, তারা নিজেদের প্রকৃত সাংবাদিক হিসেবে দাবি করে। কিন্তু এদের বাইরের সাংবাদিকদের মান্যতা দিতে রাজি নয়। অথচ বাইরে থাকা সাংবাদিকরা অনেক ক্ষেত্রেই আরো বেশি লেখালেখি করে। যেটা অনেক সময় এই তথাকথিত সাংবাদিকদের তুলনায় গুণগত মানে এগিয়ে থাকে। এখানে প্রশ্ন ওঠে, পেশাদার সাংবাদিক বনাম অপেশাদার সাংবাদিক কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়? শুধুমাত্র প্রেসক্লাবের সদস্য হলেই কি কেউ পেশাদার সাংবাদিক হয়ে যায়, আর সদস্য না হলে অপেশাদার? এই বৈষম্যের প্রশ্ন সামনে রেখে আমি কিছু কথা বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে দেখা গেছে, চাটুকার সাংবাদিকরা যারা পূর্বে শেখ হাসিনা সরকারের দালালি করেছে, তারা এখন বিভিন্নভাবে নিজেদের নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে! তারা এক সময় যেভাবে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা প্রেমিক সেজে দালালি করেছে, আজ তারা একইভাবে ড. ইউনুস প্রেমিক হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করছে। এ ধরনের সাংবাদিক নেতাদের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করতে গেলে অন্তহীন কথার স্রোত শুরু হয়ে যায়। একজন সাধারণ লেখক হিসেবে, আমি যখন এই তথাকথিত সাংবাদিকদের অন্যায় অত্যাচারের কথা লিখতে বসি, তখন লজ্জা হয়। এই তথাকথিত নেতারা নিজেদের প্রেসক্লাবের বাইরে থাকা নির্ভীক সাংবাদিকদের প্রকৃত সাংবাদিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। তারা প্রায়ই এই সাংবাদিকদের ভুয়া বা অপেশাদার বলে আখ্যা দেয়, যা সম্পূর্ণ অন্যায়। অথচ প্রেসক্লাবের সদস্যদের মধ্যে অনেক নামসর্বস্ব পত্রিকার সাংবাদিক রয়েছে, যাদের কাজ সম্পর্কে কারো কোনো ধারণাও নেই। তারা প্রেসক্লাবের সদস্য হওয়ার মাধ্যমে বড় সাংবাদিকের পরিচয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে রেখেছে। প্রকৃতপক্ষে, যদি কাউকে ভুয়া সাংবাদিক বলতে হয়, তবে তাদেরকেই বলতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য হওয়ার দাবি নিয়ে যারা এতদিন ধরে বৈষম্যের শিকার হয়েছে, যারা সমাজের চোখে ভুয়া সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত হয়েছে, তাদের কী হবে? তারা আজ বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে নিজেদের অধিকার নিয়ে কথা বলছে। তারা শেখ হাসিনা সরকারের সময় যারা দালালি ও চাঁদাবাজি করে সম্পদের পাহাড় গড়েছে, তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে। এই চেষ্টা ব্যর্থ করতে কিছু মানুষ তাদেরকে ভুয়া সাংবাদিক বলে প্রচার চালাচ্ছে। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব শুধু কিছু সাংবাদিকের আশ্রয়স্থল হতে পারে না। যেহেতু এটি চট্টগ্রামের, তাই শহরের বাইরে থেকেও সদস্য হওয়ার অধিকার থাকা উচিত। কিন্তু এই ক্লাবকে কিছু সাংবাদিক তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করেছে এবং লুটপাট করে খাচ্ছে। তবে এখানে আমি বলবো, গণহারে সদস্য গ্রহণের প্রয়োজন নেই, কিন্তু যাদের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে, তাদেরকে সদস্য করলে ক্লাবের কোনো ক্ষতি হবে না। বরং এতে ক্লাবের উন্নতি হবে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, সদস্য সংখ্যা বাড়লে তাদের লুটপাটের ভাগাভাগি করতে হবে, যা তাদের পছন্দ নয়।
এই সংকটের সমাধানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের উচিত একটি গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করা। মনে রাখতে হবে, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব কারো একক মালিকানা নয়। এটি চট্টগ্রামের সকল গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য। সরকারের যেমন পরিবর্তন হয়, তেমনি প্রেসক্লাবের নেতৃত্বও পরিবর্তিত হবে। তবে ক্লাব তার স্থানেই থাকবে, এবং এর সদস্যরাই ক্লাবকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
মনের ক্ষোভ খুবই খারাপ একটি জিনিস, এবং যখন তা বিক্ষোভে পরিণত হয়, তখন তা অত্যন্ত ভয়ংকর হতে পারে। প্রেসক্লাবের অতিউৎসাহী নেতাদের তাদের আচরণ ঠিক করতে হবে। তারা যে কোনো কথা শুনলেই পেশাদার সাংবাদিকদের ভুয়া সাংবাদিক আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করে, তা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রেসক্লাবের কোনো ক্ষমতা নেই সাংবাদিকদের সনদ দেওয়ার। পত্রিকা থেকেই সাংবাদিকরা সনদ পেয়ে থাকে, যা তাদের প্রেসক্লাবের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা দেয়। আমি আশা করি, এই চলমান সমস্যা সমাধান হবে এবং সকল বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে চট্টগ্রামের সব গণমাধ্যম কর্মী একসাথে কাজ করবে।
সাংবাদিকতা নিয়ে দলাদলি হানাহানি মারামারি হামলা মামাল কোন অবস্থায় সুন্দর বিষয় নয়- সাংবাদিকরা রাজনীতি করবে এবং করতে পারবে, যুগে যুগে করে আসছে, তা কিন্তু পেশাগত স্থানের বাইরে। রাজনীতি করার সবার অধিকার রয়েছে, উপমহাদেশে বেশিভাগ লেখক ও সাংবাদিকরাই রাজনৈতিক ছিলেন, তবপ তাদের রাজনীতির একটা সীমারেখা নির্দিষ্ট ছিলো, তারা রাজনীতিকে দালালী হিসেবে নিতেন না। রাজনীতি কেন পেশা নয়, রাজনীতি হলো মানবসেবা, এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করা, আজ যেসব সাংবাদিকরা রাজনীতি করেন তা কিন্তু মানবসেবা নয়, রাজনীতির সাইনবোর্ড গলায় ঝুলিয়ে নিজেকে জাহেল করে অবৈধ সুযোগ সুবিধা আদায় করা- এই সব কথা লিখতে আমার লজ্জা হচ্ছে আজ সাংবাদিকরা প্রশ্নবোধক প্রাণী হিসেবে উপস্থাপিত হচ্ছে মানুষের চোখে।

লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক ও সাংবাদিক।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Our Like Page