শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০১:১৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
ছিলোনিয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক মিলনায়তন ও প্রধান শিক্ষকের কক্ষ উদ্বোধন কারাগার” আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নারী কর্মীদের জন্য যেন মরণ ফাঁদ। শারদীয় দূর্গা পূজা উপলক্ষে কালিয়ায় বিশেষ আইন-শৃঙ্খলা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত রিকশাচালক বাবার দুই ‘রাজকন্যা’র স্বপ্নপূরণ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বুশরা ও তৃষা ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে জমি নিয়ে প্রতারণা ভাগ্নের সাথে মামার। সংযুক্ত আরব আমিরাত দুবাই শাখার ব্যবস্থাপনায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ:) মাহফিল কালীগঞ্জে জমির মূল্যের দাবিতে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ জনগণের মুক্তির প্রত্যাশা অপরাধ ও জঙ্গী উত্থানের অবসান ঘটাতে শেখ হাসিনাকেই চায় বাংলাদেশ আনোয়ারায় গ্রীন চট্টগ্রাম এ্যালায়েন্সের আয়োজনে বৃক্ষ রোপণ ও বিতরণ অনুষ্ঠান আজ বিশ্ববিদ্যালয় ডাকসু নির্বাচনকে ‘প্রহসন ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র’ বললেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ইনান

রাউজান: ফজলে করিমের দেয়ালহীন কারাগার

রাউজান: ফজলে করিমের দেয়ালহীন কারাগরে


স,ম,জিয়াউর রহমান

প্রতিটি কারাগারেই নির্ধারিত সীমানায় দেয়াল থাকে, কিন্তু বাংলাদেশের চট্টগ্রামের রাউজান ছিলো এক অদ্ভুত কারাগার। এখানে কোনো দেয়াল ছিল না, তবুও কেউ ইচ্ছা করলেই সেখানে প্রবেশ করতে পারত না বা বেরিয়ে আসতেও পারত না। এই কারাগারের নির্মাতা ও শাসক ছিলেন এবি এম ফজলে করিম। একজন নিষ্ঠুর শাসক যিনি রাউজানবাসীকে দীর্ঘ বছর যাবত তার নিয়মনীতি মেনে জিম্মি করে রেখেছিলেন। ফজলে করিমের শাসন ছিলো উত্তর কোরিয়ার স্বৈরশাসক কিম জং উনের মতো। তার কথাই ছিল আইন, আদালত এবং বিচার। পুলিশের ভূমিকা থেকে শুরু করে ডাকাত, সাধু—সব চরিত্রই তিনি নিজে ধারণ করতেন।
রাউজান ছিল এক ভিন্ন দেশ এবং জগত। যেখানে কোনো আইনের শাসন ছিল না, চলত শুধুমাত্র ফজলে করিমের শাসন। তার কথায় রাতকে দিন এবং দিনকে রাত বানানো সম্ভব ছিলো। তার আদেশ অমান্য করার সাহস কারও ছিল না। হাজার হাজার রাউজানবাসী জিম্মি অবস্থায় কাটানোর পর অবশেষে মুক্তি পেয়ে এখন ঈদ আনন্দের মতো অনুভূতি প্রকাশ করছে।
ফজলে করিমের ক্যাডার বাহিনী পুলিশের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখত। সারা রাউজানে অসংখ্য হিংস্র মনোভাবের পেশাদার খুনি তার হয়ে কাজ করত, বিশেষ করে রাউজান নোয়াপাড়ায় তাদের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। বাবুল টাইগার নাসিরসহ শত শত খুনি ছিল তার অঘোষিত কিলার। তাদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর কিলার ছিল আজিম মাহমুদ। যিনি অসংখ্য নারী, পুরুষ এবং শিশু হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার ফাঁসির রায় হলেও ফজলে করিমের আশীর্বাদে তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন এবং পরে রাউজানসহ পুরো চট্টগ্রামকে কিলারদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিলেন। আজিম মাহমুদের বিরুদ্ধে আমি ধারাবাহিকভাবে লেখালেখি করেছিলাম এবং আমার আবেদনের ভিত্তিতে তখনকার দায়িত্ব পালনরত RAB-7 এর এসপি জসিম সঠিকভাবে তদন্ত করে আমার লেখা ও অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তাকে তাদের নিয়ম অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করেন। কিন্তু আজিম মাহমুদ নিখোঁজ হওয়ার পর তার হত্যার অভিযোগে খুলশী থানায় মো মনছুর আলম পাপ্পী এবং আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। আমি সেই মামলায় কখনো কোর্টে যাইনি এবং প্রশাসনের সঙ্গেও কোনো যোগাযোগ করিনি। তবে মামলাটি একাধিক সংস্থার তদন্ত শেষে প্রশাসন ফাইনাল রিপোর্ট দেয়। আমি জানি আমি প্রশাসনের সহযোগিতায় একটি ভালো কাজ করেছি এবং প্রশাসনও জানত আজিম মাহমুদ কোথায় এবং কীভাবে গুম হয়েছে।
তখন ফজলে করিমের প্রভাব ও নির্দেশে তার বাহিনীর কিলাররা আমাকে হত্যার প্রচেষ্টাও চালিয়েছিল কিন্তু আমি ন্যায়ের পথে ছিলাম বলে আল্লাহর রহমতে এখনও বেঁচে আছি। তৎকালীন প্রশাসন বিশেষ করে RAB-7 আমার জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিল। ফজলে করিম আমাকে গায়েল করার জন্য বহু চেষ্টা করেছিলেন। রাউজান থানা থেকে মিথ্যা মামলা দেওয়াসহ একটি গ্রুপকে আমাকে এবং পাপ্পীকে হত্যা করার জন্য শপথবদ্ধ করে দায়িত্ব দিয়েছিল। তারা দীর্ঘ বছর আজিম মাহমুদের নিখোঁজ ও লাশ গুমের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পাগলা কুকুরের মতো আচরণ করেছিল। তবে আমি তাদের পাত্তা দিইনি এবং কখনো আপোসও করিনি। বহু বছর পরে রাউজানের উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ সাহেবের উদ্যোগে তাদের সঙ্গে সামনাসামনি বসেছিলাম এবং তারা আমার কাছে আত্মসমর্পণ করে দুঃখ প্রকাশ করেছিল। এর বিস্তারিত কাহিনী এবং ফজলে করিমের অঘোষিত কিলারদের ইতিকথা সহ স্বৈরশাসক ফজলে করিমের অপকর্ম, অরাজকতার ইতিহাস আমি লিখব।

লেখকঃ সাংবাদিক গবেষক টেলিভিশন উপস্থাপক।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Our Like Page