নরসিংদী স্বাস্থ্য বিভাগের মুর্তিমান আতঙ্ক যুবলীগ নেতা বুলবুল (৩)দুর্ণীতির টাকায় গড়ে তুলেছে সম্পদের পাহাড়
ক্রাইম রিপোর্টার নরসিংদী জেলাঃ-নরসিংদী স্বাস্থ্য বিভাগের মুতীর্মান আতঙ্কের নাম যুবলীগ নেতা কালাম সারোয়ার বুলবুল। আওয়ামীলীগ সরকার আমলে তার হুঙ্কার ও ভীতি প্রদর্শণে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিটি কর্মকর্তা—কর্মচারী দিন যাপন করেছে অজানা আতঙ্কে। সদ্য বিদায়ী সরকারের আমলে নরসিংদী স্বাস্থ্য বিভাগে নিয়োগ-বদলী, টেন্ডার, সার্টিফিকেট বাণিজ্যের দুর্ণীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া টাকায় গড়েছে সম্পদের পাহাড়। যুবলীগের প্রভাব খাটিয়ে নরসিংদী ১শত শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতাল, জেলা সিভিল সার্জন এর কার্যালয়সহ প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতো কালাম সারোয়ার বুলবুল।
স্বাস্থ্য বিভাগের সামান্য কর্মচারী হয়ে গাড়ী, বাড়ী,ফ্লাট, দোকান ও একাধিক ব্যবসার মালিক হওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন আলোড়িত হচ্ছে। মাসে কত টাকা বেতন পেলো, শহরে বসবাস করে কীভাবে এতো বিত্ত বৈভবের মালিক হলো এনিয়ে সাধারণের মাঝে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই।
সূত্র জানায়, চাকুরীকালীণ সময়ে কালাম সারোয়ার বুলবুল নরসিংদী শহরের বিলাসদী এলাকায় জায়গা কিনে তাতে ৪তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করে বসবাস শুরু করে। তার রয়েছে চিনিশপুর এলাকায় বাড়ী, শিলমান্দি এলাকায় বাড়ী ও জমি, শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড নদী বাংলা মার্কেটে একাধিক দোকান, ঢাকার মাতুইল এলাকায় বাড়ী। এছাড়া রয়েছে মাধবদী নুরালাপুর এলকায় কাপড়ের ফ্যাক্টরী, মাধবদী বাজারে ছেলের ব্যবসা, নরসিংদী জেলা হাসপাতালের পার্শ্বে ভিক্টোরিয়া ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার, নরসিংদী মডেল হাসপাতালসহ ৪/৫ হাসপাতাল ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের ব্যবসা, রয়েছে প্রিমিউ ব্রান্ডের গাড়ী। তাছাড়া নামে বেনামে রয়েছে তার বিপুল পরিমান অর্থ সম্পদ।
চাকুরীতে থাকা অবস্থায় প্রায় শত কোটি টাকার বিত্ত বৈভবের মালিক হওয়ায় বিষয়টি নজরে আসে স্থানীয় লোকজনের ও গণমাধ্যম কর্মীদের। ইতোপূর্বে একাধিক গণমাধ্যমে দুর্ণীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক কালাম সারোয়ার বুলবুল বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশ হলে শুরু হয় বুলবুলের দৌড়ঝাপ কখনো অন্যকোন পত্রিকায় প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অথবা তদন্তকারী সংস্থাকে ম্যানেজ করে ফিরে আসে আগের রূপে। মরিয়া হয়ে উঠে অবৈধ উপায়ে টাকা রোজগার করতে।
সূত্র আরো জানায়, প্রায় এক বৎসর পূর্বে কালাম সারোয়ার বুলবুল এর বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত শুরু হয়। প্রতিমাসে একবার দুদক কার্যালয়ে গিয়ে হাজির হতে হয় বুলবুল ও তার স্ত্রীকে।
চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করার পর আরো বেপরোয়া হয় বুলবুল। শিল্প মন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এর ছত্রছায়ায় ও জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক শামীম নেওয়াজ, যুবলীগ নেতা পৌর কাউন্সিলর পারভেজ এর প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় বুলবুল ও তার সহযোগী স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারী বেলায়েত হুসেন প্রভাব বিস্তার করতে থাকে জেলার প্রতিটি হাসপাতালে। তাদের সাথে যোগাযোগ না করে হাসপাতালগুলোর বাৎসরিক ঔষধ ক্রয়, রোগীদের খাবার সরবরাহ, পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগসহ প্রতিটি বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতো বুলবুল। তার কথার বাইরে গিয়ে হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ কোন টেন্ডার বা অর্থনৈতিক কার্যক্রম করতে গেলেই বাধ সাধতো সে। কর্মকর্তা কর্মচারীদের বদলী এমনকি চাকরী থেকে বরখাস্তের হুমকী দিতো। নরসিংদী স্বাস্থ্য বিভাগের কথিত মাফিয়া বুলবুল সিন্ডিকেটকে না জানিয়ে কতৃপক্ষ কোন কর্মকর্তা কর্মচারীকে বদলী করলে সাথে সাথে মন্ত্রীর ডিও লেটার এর মাধ্যমে তা পুন:বহাল করতো। সে কোন কর্মকর্তা কর্মচারীর উপর ক্ষিপ্ত হলে নামে বেনামে তার বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নিকট মিথ্যা অভিযোগ করে হয়রানী করা হলো যেন তার রোটিন ওয়ার্ক। এক কথায় টেন্ডার, নিয়োগ বদলী বাণিজ্য করতো এ মাফিয়া চক্র। গত ৫ আগষ্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে তার অপকর্মের সহযোগীরা গা—ঢাকা দিলে স্বাস্থ্য বিভাগে বুলবুল তার আধিপত্য ধরে রাখতে পূর্বের ন্যায় প্রতিটি হাসপাতালে যাতায়াত, কর্মকর্তা কর্মচারীদের নামে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নিকট মিথ্য অভিযোগ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত রেখেছে বলে জানা গেছে। (চোখ রাখুন)